৬৭ বছর বয়সী কালাম বলেন, তিনি আগে কখনও ঢাকাকে এত নির্জন দেখেননি।
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বর্তমান করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব বিশ্বের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এবং এটি মন্দা বয়ে নিয়ে আসতে পারে।
করোনা সংক্রমণ রোধে ঘরে থাকার বিষয়ে সরকারি নির্দেশনা বাধ্য হয়ে লঙ্ঘন করার কথা উল্লেখ করে তিন মেয়ে ও এক ছেলের পিতা রিকশা চালক কালাম দু:খ প্রকাশ করে ইউএনবিকে বলেন, ‘হঠাৎ করে আমি বড় সমস্যায় পড়ে গেছি। নিজেদের সুরক্ষার জন্য আমাদের বাড়িতে থাকতে হবে, এটি ভালো সিদ্ধান্ত। কিন্তু আপনি ক্ষুধার্ত থাকলে আপনার কাছে বিকল্প কী আছে?’
ঢাকা ও এর আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার রিকশা চালক বসবাস করেন। কিন্তু সরকার গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর তাদের বেশিরভাগই রাজধানী ছেড়েছেন।
কেরানীগঞ্জের জিনজিরা থেকে ঢাকায় আগত কালাম বলেন, ‘আমার মনে হয় বেশিরভাগ রিকশা চালকই নিজ নিজ গ্রামে চলে গেছেন।’
বর্তমানে তার দৈনিক আয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন ১০০-১৫০ টাকার বেশি আয় করতে পারি না। যা আগে ছিল অন্তত ৬০০ টাকা। আয় কমে যাওয়ায় মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি।’
যারা দিন আনে দিন খায় তাদের সহায়তা দেয়ার জন্য সরকার ইতিমধ্যে একটি পদক্ষেপ নিয়েছে। ভিক্ষুক, দিনমজুর, রিকশা চালক, ভ্যান চালক, পরিবহন শ্রমিক, রেস্তোরাঁ শ্রমিক, রাস্তার পাশের চায়ের দোকানদারসহ বিভিন্ন শ্রেণির অসহায় মানুষদেরকে জরুরি খাদ্য সরবরাহের সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে।
কোনো উৎস থেকে বিনামূল্যে খাদ্য সহায়তা পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে কালাম বলেন, ‘আমি ধানমন্ডি-৮ নম্বরে গিয়েছিলাম। কিন্তু পৌঁছানোর আগেই খাদ্য বিতরণ শেষ হয়ে যায়। পরে অপেক্ষা না করে যাত্রী খোঁজা শুরু করি।’
নিজেকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করে তিনি বলেন, ‘বিনামূল্যে খাদ্য সহায়তা পাওয়ার মতো ভাগ্য সবার নেই। হয়তো আমার ভাগ্যে সেদিন কিছু ছিল না।’
কালাম আকাশের দিকে চেয়ে দেখল এবং গন্তব্য মালিবাগ হওয়ায় এরপরই রিকশা নিয়ে সেন্ট্রাল হাসপাতালের দিকে এগিয়ে গেল।
‘গত এক সপ্তাহের মধ্যে আমি প্রথমবারের মতো ৮০ টাকা ভাড়ায় দীর্ঘ দূরত্বের যাত্রী পেয়েছি। তবে রাস্তাঘাট ফাঁকা হওয়ায় এবং যানজট না থাকায় এখন বেশিরভাগ যাত্রীই ভাড়া কম দিতে চান। আর বেশিরভাগ ট্রিপগুলোই স্বল্প দূরত্বের,’ যোগ করেন কালাম।
এই সংবাদদাতাকে যাত্রী হিসেবে বহন করে এলিফ্যান্ট রোড পার হওয়ার সময় ধূমপানরত একদল তরুণের দিকে ঈঙ্গিত করে রিকশা চালক কালাম বলেন, ‘দেখুন, এরা অকারণেই বাসা থেকে বেরিয়েছে। পরিবারকে খাওয়ানোর জন্য আমার মতো মানুষকে বাইরে বের হতে হয়েছে। কিন্তু এদের উচিত ঘরে থাকা।’
কালামের মতো অনেক রিকশা চালকই শহরের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ সদস্যদের বাধার মুখে পড়ছেন, যারা জরুরি কোনো কাজ ছাড়া মানুষকে ঘরে থাকার জন্য উৎসাহিত করছেন।
‘তারা (পুলিশ) খুব ভালো কাজ করছেন। এটা তাদের দায়িত্ব। আমাদের সবার উচিত একে অপরকে সাহায্য করা। দিনে খাওয়ার মতো পর্যাপ্ত আয় হলেই আমি ঘরে ফিরে যাবো,’ বলেন কালাম।
করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সাধারণ ছুটি ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
এই বর্ধিত ছুটির বিষয়ে কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করে কালাম আরও বলেন, ‘দেশের মানুষকে বাঁচানো জরুরি। বিশ্বের সব মানুষের জন্য দোয়া করি।’
মালিবাগ রেলগেটে পৌঁছানোর পর বড় একটি হাসি দিয়ে কালাম আত্মবিশ্বাসের সাথে বলেন, ‘আমরা অনেক আশীর্বাদপ্রাপ্ত। এই করোনাভাইরাস আমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারব না।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য-প্রমাণ অনুযায়ী, গরম ও আদ্র আবহাওয়ার অঞ্চলসহ সব অঞ্চলেই করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে।
সংস্থাটি আরও জানায়, ‘কোভিড-১৯ থেকে নিজেকে রক্ষার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো ঘন ঘন হাত ধুয়ে ফেলা। এর মাধ্যমে হাতে থাকা ভাইরাসগুলো নির্মূল হবে এবং হাত দিয়ে চোখ, নাক বা মুখ স্পর্শ করার মাধ্যমে তা শরীরে সংক্রমিত হবে না।’
আরও পড়ুন: করোনাভাইরাস: খাদ্য ও অর্থ সংকটে পঞ্চগড়ের তাঁত শ্রমিকরা
উল্লেখ্য, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন আরও পাঁচজনসহ শুক্রবার পর্যন্ত দেশে মোট ৬১ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। তবে এ পর্যন্ত ২৬ জন করোনা আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
এছাড়া বাংলাদেশে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মোট ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে সরকার।